হ্যাচারীর দখলে পাউবো জমি ও শ্মশানের পথ, মরদেহ সৎকারে নানা সমস্যা
- আপডেট সময় : ০৫:০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
আলীপুর চিংড়ি হ্যাচারি লিমিটেড পাউবোর জমি দখল করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬০ বছরের পুরানো শ্মশানের প্রবেশ পথ। বর্তমানে হ্যাচারির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মূল গেটটি থাকে সবসময় তালাবদ্ধ। ফলে মরদেহ সৎকারে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়কে। অন্যদিকে বেহাত হচ্ছে ৪৮ নং পোল্ডার অন্তর্ভুক্ত পাউবোর জমি। তবে অজ্ঞাত কারণে পাউবো কর্তৃপক্ষের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারের তৎপর নেই।
পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর স্লুইসগেট (জলকপাট) সংলগ্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গা দখল করে হ্যাচারী স্থাপন করেছেন প্রভাবশালীরা। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের দুই প্রভাবশালী নেতা কুয়াকাটা পৌরসভা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা এবং লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লার ভাই আবুল হোসেন মোল্লা পাউবোর জমি দখল করেছেন। তার সাথে রয়েছেন মৎস্যবন্দর আলীপুর বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হাজী আবুল কালাম হাওলাদার, হাজী নজরুল ইসলাম, হাজী আবুল হোসেন ভূইয়া, শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন। তাদের ভয়ে হিন্দুরা শ্মশানের পথ আটকানোর প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি। আলীপুর চিংড়ি হ্যাচারী লিমিটডের পেছনে খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে প্রায় ৬০ বছর আগের সনাতন সম্প্রদায়ের শ্মশানের ৩০ শতাংশ জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জন্য বিএস রেকর্ড হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশ। অপরদিকে ১.৬৬ জমি ক্রয় করে প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছেন প্রায় ৩ একর।
শ্মশানের একমাত্র প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় সম্প্রতি এক মরদেহ সৎকারে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভের পর হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পথ খুলে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্মশানে যাতায়াতের পথ খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসলেও হ্যাচারী মালিকপক্ষ কোন সহযোগিতা করছে না। আমরা আমাদের শ্মশানের জমি দখলমুক্ত চাই।
আলীপুর বাজারের ব্যবসায়ী উত্তম ঘোষ বলেন, লতাচাপলী, কুয়াকাটা ও আশপাশের সনাতনী জনগোষ্ঠীর জন্য এটিই একমাত্র শ্মশান। জায়গাটি দখলে নেওয়ায় আমরা ধর্মীয় সংকটে পড়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত হ্যাচারী মালিক পক্ষের মো. আবুল হোসেন ভূইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা শ্মশানের জমি দখল করিনি, নিয়ম মেনে জমি ক্রয় করে হ্যাচারী করেছি। পাউবোর জমিতে আমরা মাছ চাষ করি না, শুধু গবাদিপশু থেকে রক্ষায় বাউন্ডারি দিয়েছি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান, হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ পাউবোর জমি ব্যবহার করেই মাছ চাষ করছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা করার সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিগগিরই সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের দাবি, পাউবো ও শ্মশানের জমি দ্রুত দখলমুক্ত করে ধর্মীয় সৎকারের একমাত্র স্থানটিকে রক্ষা করা হোক।



















