ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের ব্যবস্থা করা হবে….এবিএম মোশাররফ হোসেন কলাপাড়ায় গর্ভবতী গরু জবাই ও মাংস বিক্রির দায়ে কসাইকে জরিমানা ও কারাদন্ড আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক জিয়া…. এবিএম মোশাররফ হোসেন নারীকে কুপিয়ে জখম, শ্লীলতাহানির অভিযোগ রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ, কথোপকথনের অডিও ভাইরাল কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী  আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন এবিএম মোশাররফ হোসেন কুয়াকাটায় রাস উৎসব উপলক্ষে চলছে শেষ মুহুর্তের সাজ সজ্জার কাজ যাত্রীবাহী ছয়টি বাস থেকে ৩৫ মন নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশ আটক করেছে ভ্রাম্যমান আদালত নিরীহ আওয়ামীলীগকে সহায়তার আহ্বান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোশাররফের এনসিপির মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহকে শাপলা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন কৃষকরা

রাশিয়া সীমান্তে নিষিদ্ধ স্থল মাইন বসানোর পরিকল্পনা ইউরোপের পাঁচ দেশের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ৭৪ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত অটোয়া কনভেনশন অনুযায়ী, স্থল মাইন উৎপাদন ও পরিবহন নিষিদ্ধ। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে পূর্ব সীমান্তে প্রতিরক্ষা।

গত তিন বছরে রাশিয়া বা রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা ন্যাটোভুক্ত ছয়টি দেশের মধ্যে পাঁচটি – ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড – সীমান্তে সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। এসব সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বেড়া নির্মাণ ও নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন।

প্রতিবেদন মতে, এখন দেশগুলো একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। আর তা হলো ল্যান্ড মাইন বসানো। এই পাঁচটি দেশ এরই মধ্যে সম্প্রতি অটোয়া কনভেনশন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে বিশ্বব্যাপী মানববিরোধী মাইন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল ব্যবহারই নয়, এই কনভেনশনের আওতায় এর উৎপাদন ও পরিবহনও নিষিদ্ধ।

রাশিয়া বা বেলারুশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা একমাত্র দেশ নরওয়ে, যেটি এখনও এই চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেনি। রাশিয়ার সঙ্গে নরওয়ের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

এই ধরনের মাইনের ব্যবহার নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কারণ সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক, উভয়ের জন্যই এই মাইন বিপজ্জনক। সংঘাতের অবসানের পরও মাইন দীর্ঘমেয়াদী হুমকি হিসাবে থেকে যায়।

২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয় হাজার মানুষ স্থল মাইনের কারণে নিহত বা আহত হন। নিহতদের প্রায় ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, যার মধ্যে অনেক শিশুও ছিল। এই বিস্ফোরক সরঞ্জাম একবার স্থাপন করা হয়ে গেলে সরিয়ে ফেলাও বিপজ্জনক, ব্যয়বহুল ও অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ।

বেসরকারি সংস্থা হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, বিশ্বের ৫৮টি দেশ এবং অন্যান্য অঞ্চলে এখনও ব্যাপকভাবে স্থল মাইন বসানো রয়েছে। কিছু সংঘাত কয়েক দশক আগে শেষ হয়ে গেলেও মাইন এখনও সক্রিয় রয়ে গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রীয় করা হয়নি।

অটোয়া কনভেনশন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করায় ২০২৫ সালের শেষ থেকে পূর্ব ইউরোপের পাঁচটি ন্যাটো দেশ আবারও মানববিরোধী মাইন উৎপাদন এবং মজুদ শুরু করতে পারবে। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে এই মাইনগুলো দ্রুত বসাতেও করতে পারবে।

বিশ্বের ১৬৪টি দেশ অটোয়া কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও ৩৩টি দেশ স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর না করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-বিরোধী মাইনের মজুদ রয়েছে মস্কোর কাছে। ধারণা করা হয়, দেশটির অস্ত্রাগারে দুই কোটি ৬০ লাখ স্থল মাইন রয়েছে। এর অনেকগুলোই এরই মধ্যে ইউক্রেনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উত্তরে ফিনল্যান্ডের লাপল্যান্ড থেকে দক্ষিণে পোলিশ প্রদেশ লুবলিন পর্যন্ত, পাঁচটি ন্যাটো রাষ্ট্র এবং রাশিয়া-বেলারুশের মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এই অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগই জনবিরল ও ঘন বনভূমিতে আচ্ছাদিত। এর ফলে এই অঞ্চল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা বেশ কঠিন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ন্যাটোর ভূখণ্ডে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন মতে, কোন কোন অঞ্চল পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, ন্যাটো বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে এমন বিশ্লেষণও করছেন।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন মতে, এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ ন্যাটো দেশের লক্ষ্য হলো- প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। অন্যান্য সীমান্তরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মাইনগুলোও যাতে অগ্রসরমান শত্রুর ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে, সেটাই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

দীর্ঘ সীমান্ত কার্যকরভাবে রক্ষা করার জন্য কয়েক লাখ মাইন এবং গোপনে স্থাপিত অন্যান্য বিস্ফোরক প্রয়োজন হতে পারে। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা কয়েক দশক ধরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং এর ফলে মানুষ ও পরিবেশের সম্ভাব্য যে ক্ষতি হবে তার  পূর্বাভাস দেওয়াও প্রায় অসম্ভব।

দ্য টেলিগ্রাফের বিদেশি সংবাদদাতা ডেভিড ব্লেয়ার এই পরিকল্পনাটিকে একটি নতুন ‘আয়রন কার্টেইন’ বা ‘লৌহ পর্দা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সীমান্তও কঠোরভাবে সুরক্ষিত ছিল। সেটাকেই আয়রন কার্টেইন বলে উল্লেখ করা হতো।

মাইন ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো এরই মধ্যে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন সীমান্ত বেড়া ও দেয়াল নির্মাণ, আধুনিক নজরদারি ও সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন এবং সেনাবাহিনী শক্তিশালীকরণ।

কিছু দেশ সীমান্তে ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করার এবং সেচ ব্যবস্থা আরও গভীর করার পরিকল্পনা করছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সেচের খাল পরিখা হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের আড়াল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর পাশে বড় গাছ লাগানোরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বাল্টিক উপকূলে রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদ এবং পূর্বে বেলারুশের মাঝখানে অবস্থিত লিথুয়ানিয়া বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংকীর্ণ স্থলপথ, যাকে সুওয়ালকি গ্যাপ বলা হয়। এই স্থলপথ দখল করলেই রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ বেলারুশের সঙ্গে স্থলপথে যুক্ত হবে। অন্যদিকে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে ভিলনিয়াস আগামী বছরগুলোতে নতুন স্থল মাইন তৈরিতে প্রায় ৮০ কোটি ইউরো (প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। 

লিথুয়ানিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোভিল সাকালিন তার দেশের জন্য ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ উল্লেখ করে এই কৌশলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেশি করে মাইন তৈরি করছে, ইউরোপ তখন অটোয়া কনভেনশনের শর্তাবলী অনুসারে নিজস্ব মজুদ ধ্বংস করেছে।

হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির অ্যাডভোকেসির প্রধান ইভা মারিয়া ফিশার মনে করেন, স্থল মাইন স্থাপনের পরিকল্পনা বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক। মার্চে পোল্যান্ড এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর তিনি বলেন, ‘বর্তমান অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ন্যায্য হতে পারে।’

তবে এমন অস্ত্র দিয়ে স্থায়ী নিরাপত্তা তৈরি করা যায় না, যা নির্বিচারে হত্যা করে, সংঘাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে মাটিতে পড়ে থাকে এবং বেসামরিক নাগরিকদের পঙ্গু করে এবং জীবিকা ধ্বংস করে, বলেন ফিশার। তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশকে রক্ষা করার বিকল্প নানা উপায় আছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রাশিয়া সীমান্তে নিষিদ্ধ স্থল মাইন বসানোর পরিকল্পনা ইউরোপের পাঁচ দেশের

আপডেট সময় : ০৭:৪১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত অটোয়া কনভেনশন অনুযায়ী, স্থল মাইন উৎপাদন ও পরিবহন নিষিদ্ধ। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে পূর্ব সীমান্তে প্রতিরক্ষা।

গত তিন বছরে রাশিয়া বা রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা ন্যাটোভুক্ত ছয়টি দেশের মধ্যে পাঁচটি – ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড – সীমান্তে সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। এসব সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বেড়া নির্মাণ ও নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন।

প্রতিবেদন মতে, এখন দেশগুলো একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। আর তা হলো ল্যান্ড মাইন বসানো। এই পাঁচটি দেশ এরই মধ্যে সম্প্রতি অটোয়া কনভেনশন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে বিশ্বব্যাপী মানববিরোধী মাইন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল ব্যবহারই নয়, এই কনভেনশনের আওতায় এর উৎপাদন ও পরিবহনও নিষিদ্ধ।

রাশিয়া বা বেলারুশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা একমাত্র দেশ নরওয়ে, যেটি এখনও এই চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেনি। রাশিয়ার সঙ্গে নরওয়ের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

এই ধরনের মাইনের ব্যবহার নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কারণ সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক, উভয়ের জন্যই এই মাইন বিপজ্জনক। সংঘাতের অবসানের পরও মাইন দীর্ঘমেয়াদী হুমকি হিসাবে থেকে যায়।

২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয় হাজার মানুষ স্থল মাইনের কারণে নিহত বা আহত হন। নিহতদের প্রায় ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, যার মধ্যে অনেক শিশুও ছিল। এই বিস্ফোরক সরঞ্জাম একবার স্থাপন করা হয়ে গেলে সরিয়ে ফেলাও বিপজ্জনক, ব্যয়বহুল ও অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ।

বেসরকারি সংস্থা হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, বিশ্বের ৫৮টি দেশ এবং অন্যান্য অঞ্চলে এখনও ব্যাপকভাবে স্থল মাইন বসানো রয়েছে। কিছু সংঘাত কয়েক দশক আগে শেষ হয়ে গেলেও মাইন এখনও সক্রিয় রয়ে গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রীয় করা হয়নি।

অটোয়া কনভেনশন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করায় ২০২৫ সালের শেষ থেকে পূর্ব ইউরোপের পাঁচটি ন্যাটো দেশ আবারও মানববিরোধী মাইন উৎপাদন এবং মজুদ শুরু করতে পারবে। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে এই মাইনগুলো দ্রুত বসাতেও করতে পারবে।

বিশ্বের ১৬৪টি দেশ অটোয়া কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও ৩৩টি দেশ স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর না করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-বিরোধী মাইনের মজুদ রয়েছে মস্কোর কাছে। ধারণা করা হয়, দেশটির অস্ত্রাগারে দুই কোটি ৬০ লাখ স্থল মাইন রয়েছে। এর অনেকগুলোই এরই মধ্যে ইউক্রেনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উত্তরে ফিনল্যান্ডের লাপল্যান্ড থেকে দক্ষিণে পোলিশ প্রদেশ লুবলিন পর্যন্ত, পাঁচটি ন্যাটো রাষ্ট্র এবং রাশিয়া-বেলারুশের মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এই অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগই জনবিরল ও ঘন বনভূমিতে আচ্ছাদিত। এর ফলে এই অঞ্চল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা বেশ কঠিন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ন্যাটোর ভূখণ্ডে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন মতে, কোন কোন অঞ্চল পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, ন্যাটো বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে এমন বিশ্লেষণও করছেন।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন মতে, এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ ন্যাটো দেশের লক্ষ্য হলো- প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। অন্যান্য সীমান্তরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মাইনগুলোও যাতে অগ্রসরমান শত্রুর ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে, সেটাই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

দীর্ঘ সীমান্ত কার্যকরভাবে রক্ষা করার জন্য কয়েক লাখ মাইন এবং গোপনে স্থাপিত অন্যান্য বিস্ফোরক প্রয়োজন হতে পারে। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা কয়েক দশক ধরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং এর ফলে মানুষ ও পরিবেশের সম্ভাব্য যে ক্ষতি হবে তার  পূর্বাভাস দেওয়াও প্রায় অসম্ভব।

দ্য টেলিগ্রাফের বিদেশি সংবাদদাতা ডেভিড ব্লেয়ার এই পরিকল্পনাটিকে একটি নতুন ‘আয়রন কার্টেইন’ বা ‘লৌহ পর্দা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সীমান্তও কঠোরভাবে সুরক্ষিত ছিল। সেটাকেই আয়রন কার্টেইন বলে উল্লেখ করা হতো।

মাইন ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো এরই মধ্যে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন সীমান্ত বেড়া ও দেয়াল নির্মাণ, আধুনিক নজরদারি ও সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন এবং সেনাবাহিনী শক্তিশালীকরণ।

কিছু দেশ সীমান্তে ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করার এবং সেচ ব্যবস্থা আরও গভীর করার পরিকল্পনা করছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সেচের খাল পরিখা হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের আড়াল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর পাশে বড় গাছ লাগানোরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বাল্টিক উপকূলে রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদ এবং পূর্বে বেলারুশের মাঝখানে অবস্থিত লিথুয়ানিয়া বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংকীর্ণ স্থলপথ, যাকে সুওয়ালকি গ্যাপ বলা হয়। এই স্থলপথ দখল করলেই রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ বেলারুশের সঙ্গে স্থলপথে যুক্ত হবে। অন্যদিকে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে ভিলনিয়াস আগামী বছরগুলোতে নতুন স্থল মাইন তৈরিতে প্রায় ৮০ কোটি ইউরো (প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। 

লিথুয়ানিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোভিল সাকালিন তার দেশের জন্য ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ উল্লেখ করে এই কৌশলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেশি করে মাইন তৈরি করছে, ইউরোপ তখন অটোয়া কনভেনশনের শর্তাবলী অনুসারে নিজস্ব মজুদ ধ্বংস করেছে।

হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির অ্যাডভোকেসির প্রধান ইভা মারিয়া ফিশার মনে করেন, স্থল মাইন স্থাপনের পরিকল্পনা বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক। মার্চে পোল্যান্ড এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর তিনি বলেন, ‘বর্তমান অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ন্যায্য হতে পারে।’

তবে এমন অস্ত্র দিয়ে স্থায়ী নিরাপত্তা তৈরি করা যায় না, যা নির্বিচারে হত্যা করে, সংঘাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে মাটিতে পড়ে থাকে এবং বেসামরিক নাগরিকদের পঙ্গু করে এবং জীবিকা ধ্বংস করে, বলেন ফিশার। তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশকে রক্ষা করার বিকল্প নানা উপায় আছে।’