কালাপাড়ায় চুক্তিপত্র জালিয়াতি করে কৃষকের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০২:২৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর কালাপাড়ায় চুক্তিপত্র জালিয়াতি করে কৃষকের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের বৈদ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মৌখিকভাবে করা পাঁচ বছরের চুক্তিকে পরবর্তীতে কৌশলে ১৫ বছরের লিখিত চুক্তিপত্রে রূপান্তর করে জমি নিজের কাছে রেখে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী লুৎফর সিকদার জানান, বালিয়াতলী
ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামে অবস্থিত লেমুপাড়া মৌজার জে.এল নং-৪৪–এর ৩৬ শতক জমি তিনি কবলা দলিলের মাধ্যমে মালিক হন এবং বি.এস জরিপে তার নামে খতিয়ানও খোলা হয়। পরবর্তীতে বালু ব্যবসার সুবিধার্থে স্থানীয় তিন ব্যক্তি—ইব্রাহিম খলিল, সিরাজ উদ্দিন এবং আলাউদ্দিন সিকদার—তার কাছে পাঁচ বছরের লিজ চায়। তিনি মৌখিক সমঝোতার ভিত্তিতে তাতে সম্মতি দেন
তিনি দাবি করেন, মৌখিক ৫ বছর থেকে ভুয়া ১৫ বছরের চুক্তি: অভিযোগ অনুযায়ী, এই মৌখিক চুক্তির সুযোগে দ্বিতীয় পক্ষ কৌশলে ১’শত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নিজেদের সুবিধামতো ১৫ বছরের একটি ভুয়া লিখিত চুক্তিপত্র তৈরি করে। লুৎফরের দাবি, তিনি লেখাপড়া না জানায় কাগজটি না পড়ে সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর করেছিলেন।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় পক্ষ মাত্র দুই বছর ভাড়া দেয়। পরবর্তী তিন বছরের ৩০ হাজার টাকা বকেয়া রেখেও তারা জমিতে দখল বজায় রাখে।
ভাড়া না পাওয়া এবং নগদ অর্থের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় লুৎফর সিকদার তার মালিকানাধীন জমিটি বৈধভাবে জাকির হোসেনের নিকট ৩১২৯ নং রেজিস্ট্রি দলিলমূলে বিক্রি করেন। জমির দখলও নতুন মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয় কিন্তু দখল নিতে গেলে বাধার মুখে পড়েন নতুন মালিক জাকির।
সিরাজ উদ্দিন পুরনো ‘ভুয়া ১৫ বছরের চুক্তিপত্র’ দেখিয়ে জমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান।
জাকির হোসেন জমিতে কাজ করতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং জীবননাশের হুমকি দেয়।
এছাড়া, জাকির ও লুৎফরকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পিত অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম খলিফা বলেন—
“সিরাজ কোনো সালিশ মানে না। আগের সরকারের সময় ক্ষমতার দাপটে ভুয়া কাগজ তৈরি করে জমি জবরদখল করে রেখেছে। এখনো ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।”
স্থানীয় হাশেম খান বলেন—
“সিরাজ অশিক্ষিত ও সহজ–সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তাকে ভুল পথে চালিত করে কিছু লোক জালিয়াতির কাগজ তৈরি করেছে। সেই ভুয়া চুক্তিপত্র দেখিয়েই জমি দখলের চেষ্টা চলছে।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিলন জানান—
“এটা স্পষ্ট প্রতারণা। লুৎফর সিকদার সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ। আরেকজনের অজ্ঞতা ব্যবহার করে এভাবে জমি দখল করার চেষ্টা মানবিকতার পরিপন্থী।”
সিরাজ উদ্দিন দাবি করেন,
“আমি বৈধভাবেই চুক্তিপত্র করেছি। এতে পনের বছরের মেয়াদ ছিল এবং এটি উভয় পক্ষের সম্মতিতে হয়েছিল। কোনো সমাধান ছাড়াই হঠাৎ জমি বিক্রি করে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু সমাধানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন”
আইনজীবী খন্দকার শিহাব উদ্দিন বলেন,
“যেকোনো চুক্তি সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য উভয় পক্ষকে অবহিত করা বাধ্যতামূলক। একতরফাভাবে কাগজ তৈরি করা অপরাধ।”
এ বিষয়ে কলাপাড়া থানার এস আই জাকির হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়েছি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে কাগজপত্র দেখে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি। যাতে এ বিষয়টি নিয়ে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। এজন্য সতর্ক করে এসেছি।
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। জনমনে প্রশ্ন—“কিভাবে একটি মৌখিক ৫ বছরের চুক্তি অশিক্ষিত কৃষকের অজ্ঞতা ব্যবহার করে ১৫ বছরে পরিণত হলো?”








